সিলেটে ৪৩ শতাংশ চিকিৎসক কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক :

রুরাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি দুর্নীতির একটি সাধারণ রূপ। এর প্রধান কারণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় কর্মীর ঘাটতি ও অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণের সংকট। দেশে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির হার ৩৫ শতাংশ।

গবেষণায় ছয়টি কারণে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি প্রভাবিত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রের অনুপযুক্ত পরিবেশ, অনুপযুক্ত স্বাস্থ্য অবকাঠামো, যানবাহন না থাকা, চিকিৎসকের নিরাপত্তার অভাব, অতিরিক্ত কাজের চাপ ও উপকরণের অপর্যাপ্ততা। পাশাপাশি রয়েছে পেশাগত উত্কর্ষের জন্য উচ্চতর ডিগ্রিতে প্রস্তুতি সুবিধার অভাব, পদোন্নতি ও বদলির জটিলতা। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে সেবাদাতার সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়ার জটিলতা, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে।

তবে চিকিৎসকের উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন মাঠ পর্যায়ের অনেক চিকিৎসক। তারা বলছেন, চিকিৎসকের অনুপস্থিতির হার এত বেশি হবে না। অনুপস্থিতির হার দিন দিন কমে এসেছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ‘আমরা যখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে যাই তখন এত অনুপস্থিতি পাই না। এখানে ডিজিটাল হাজিরার ডাটাবেজে তথ্যের বিভ্রাট থাকতে পারে। চিকিৎসকরা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণে যান, অফিসের কাজে বিভিন্ন জায়গায় যান। তাই হাজিরায় এমনটা হতে পারে। উপজেলা বা জেলায় এখন চিকিৎসকরা মোটামুটি উপস্থিত থাকেন। সকাল ৮টায় হয়তো কেউ কেউ হাসপাতালে বসতে পারেন না। ১ ঘণ্টা দেরি হতে পারে। তবে জরুরি বিভাগে কখনো চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন না।’

বিভাগীয় এ পরিচালক জানান, দেশে সাত বিভাগের মতো বরিশাল বিভাগেও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অন্য কর্মীদের ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় অনেক পদ শূন্য পড়ে আছে। এ বিভাগে প্রায় তিন হাজার চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তবে এর অনুকূলে রয়েছেন মাত্র ৫০ শতাংশ চিকিৎসক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় ধরনের প্রমাণসাপেক্ষে জরিপ না হলে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির বিষয়টি বলা যাবে না। সরকারি হাসপাতালে সক্ষমতার বেশি রোগী চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও অন্যান্য জনবলের সংকট রয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যন্ত্রাংশসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়েরও ঘাটতি রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকের কাজের চাপ এত বেশি যে একজন রোগীর অপেক্ষাকাল দীর্ঘ হয়ে যায়। যার জন্য সেবাপ্রত্যাশীরা মনে করেন, তারা চিকিৎসককে পাচ্ছেন না। বহির্বিভাগে চিকিৎসকরা সাধারণত যথাসময়েই উপস্থিত হন। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে সক্ষমতার কয়েক গুণ রোগী আসে। সেজন্য রোগীকে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হন না, বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা দেরি করেন। তবে সবাই যে এমন করেন তা বলা যাবে না। বেসরকারি বা প্রাইভেট প্র্যাকটিসে চিকিৎসকদের অনেকে শ্রম দেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে সরকারি কর্মক্ষেত্রে ঘাটতি হয়ে যায়।’

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আরো পরিশীলিত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। সরকারি বেতন নিয়ে কেউ সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হবেন না, অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন, তা হতে দেয়া যাবে না। আমরা বারবার বলে এসেছি, সমস্যার সমাধান করার উত্তম পন্থা হলো একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করা। এ বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *