দম্পতির প্রতারণার টাকায় দুই বাড়ি

রাজশাহীর একটি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি নেন মো. আহসানুল আজিম (রাজিব)। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে চাকরি ছেড়ে নিজেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সরকারি চাকরিজীবী বাবার পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন বাড়তি মুনাফা দেওয়ার কথা বলে। তা ছাড়া নিজের প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। এই কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জিন্নাত ফাতেমা।

২০১১ সালে ‘রাজশাহী ডিজিটাল বিজনেস প্লাস লিমিটেড’ নামের ওই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন আহসানুল আজিম। নিজে হয়েছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর স্ত্রীকে করেছিলেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। দুই বছর তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, এই দম্পতি এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রতারণা করেছেন। দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাঁরা। এখন পর্যন্ত তাঁদের ৩৯ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেই টাকায় তাঁরা রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলায় দুটি বাড়ি বানিয়েছেন। একটি বাড়ি পাঁচতলা ও আরেকটি চারতলা। প্রতারণার টাকায় জমিও কিনেছেন তাঁরা। আদালতের নির্দেশে ওই বাড়ি ও জমি জব্দ করেছে সিআইডি।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে ২০২১ সালে রাজশাহী মহানগরের রাজপাড়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে। ওই মামলায় আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীর একটি আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ। সেখানে আহসানুল ও তাঁর স্ত্রীর প্রতারণার এই বিবরণ উঠে এসেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আহসানুল আজিমের বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার হোসেনিগঞ্জ গ্রামে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে বগুড়া কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। তার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। আর তাঁর স্ত্রী পলাতক অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করেছেন।

২০০ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা

সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, প্রতারণার জন্য রাজশাহী ডিজিটাল বিজনেস প্লাস লিমিটেডের পাশাপাশি নিজের ও স্ত্রীর নামে আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন আহসানুল। এসব প্রতিষ্ঠানে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তাঁরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১২ বছরে এই দম্পতি প্রায় ২০০ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র,শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে চাকরি দেওয়ার কথা বলে একেকজনের কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিতেন আহসানুল আজিম। নিজের প্রতিষ্ঠানেও চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিতেন তিনি। এ ছাড়া অধিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে আমানত সংগ্রহ করত তাঁর প্রতিষ্ঠান।

চাকরির জন্য টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর বোয়ালিয়ার হোসেনিগঞ্জ গ্রামের রোকসানা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিন লাখ টাকা দিয়েছিলাম। টাকা ফেরত পাই নাই। আমার মতো বহু মানুষের টাকা মেরে দিয়েছে তাঁরা।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *