বাঘের থাবায় কুপোকাত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া!

সিরিজ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশকে এক ডজন শর্ত দিয়েছিল। গ্যালারি থেকে বল আনা যাবেনা, হাত মেলানো যাবেনা ব্লা ব্লা। ভাগ্যিস মুস্তাফিজকে খেলানো যাবেনা এই শর্ত দেয়নি, তাহলে বাংলাদেশের সিরিজ জেতা স্বপ্ন অধরা থেকে যেত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের সবগুলো শর্ত মেনে নিয়ে তাদেরকে বলতে গেলে জামাই আদরে এনে ছিল। যেহেতু তাদের জামাই আদরে এনেছে তাই বড়যাত্রীদের মেহমানদারী না করলে হয়। সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ আতিতেয়তার ট্রেলার দিল। আশাকরি বাংলাওয়াশ করে ষোলো কলা পুর্ন করবে। 

অধিনায়ক রিয়া্দের বুদ্ধিদীপ্ততা

অধিনায়ক মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ব্যাট হাতে প্রথম দুই ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন । কিন্তু সিরিজ নির্ধারনি ম্যাচে ঠিকই দায়িত্বশীল ইংনিস খেলে দলকে লড়াই করার মত পুজি এনে দেন।তাছাড়া এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পেছনে মাহামুদউল্লাহর ঠান্ডা মাথার অধিনায়কত্ব টনিকের মত কাজ করেছে।  

সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স 

তিন ম্যাচে সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে খুব বেশি না করতে পারলেও তার ছোট ছোট অবদানগুলো দলের জন্য ঔষধের মত কাজ দিয়েছে। বল হাতেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন। তাছাড়া ম্যাচের গুরুত্তপূর্ণ সময়ে মাহামুদ্দুল্লাহকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন। মুদ্দা কথা একজন অলরাউন্ডার হিসিবে তিনি তার রোল খুব ভালো ভাবে নেভাতে পেরেছেন।

লোয়ার মিডিল অর্ডারে আফিফের দৃঢ়তা

মিডিল অর্ডারে বাংলাদেশের ভরসার আরেক নাম মুশফিকুর রহিল না থাকায় দলের মিডিল অর্ডার নিয়ে যথেস্ট মাথাব্যাথা ছিল। তরুন আফিফ দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মিডিল অর্ডারে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে মুশফিকের অভাব বুঝতে দেননি। 

আফিফ হোসাইন দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং করে দিয়েছেন। সবগুলো ম্যাচেই দলের প্রয়োজনের মুহুর্তে ভালো স্ট্রাইক রাইটে ব্যাটিং করে জয়ের পথ সুগম করেছেন।  

এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ এরন ফিঞ্চ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাদের বোলিং লাইনাআপে ছিলেন নিয়মিয় সবাই। আফিফ স্টার্কের গতি ও জ্যাম্পার লেগ স্পিন খুবই ভালো ভাবে সামলে খুবই ম্যাচুরিটির সাথে ব্যাট করেছেন। যা অবশ্যই সামনের সিরিজগুলোতে তার জন্য কাজে দিবে।

উইকেটের সামনে ও পেছেন সোহানের পটুতা

উইকেটের সামনে ও পেছেনে সমানভাবে ক্ষুধার্ত মনে হয়েছে নুরুল হাসানকে। বোলারদের উৎসাহ দেয়া থেকে শুরু দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইংনিস খেলা সবই করেছেন যথাযথ ভাবে। দি্বতীয় টি-টিয়েন্টিতে বাংলাদেশ যখন সাকিব ও মাহামুদুল্লাহর উইকেটে হারিয়ে ধুকছিল তখন তিনি আফিফকে সংগে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌছে দেন। এমনকি তৃতীয় ম্যাচে যদিও দুর্ভাগাক্রমে রান আওট হয়ে যান,  কিন্তু ৫ বলে ১১ করে বড় ইংনিসের আভাস সেন।

নাসুমের স্পিন ভ্যাল্কি

সিরিজের প্রথম ম্যাচে মূলত নাসুম আহমেদের ৪ উইকেটের উপর ভর করে ১৩১ রানের মত ছোট পুজি নিয়েও বাংলাদেশ জিতেছিল। পরের ম্যাচে একটু ছন্দপতন ঘটলেও সিরিজ নির্ধারনি ম্যাচে দারুন বোলিং করে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন।

দুর্দান্ত মুস্তাফিজ 

প্রথম দুই ম্যাচে জঘন্য ব্যাটিং করলেও সিরিজ বাচানোর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া মিচেল মার্শ ও বেন ম্যাকডারমেন্টের পার্টনারশিপের উপর নির্ভর করে বেশ ভালো জবাব দিচ্ছিল। ভালো ব্যাটিং করলেও সিরিজের অন্য ম্যাচগুলোর মত মুস্তাফিজের বোলিং তাদের কাছে গোলক  ধাধাই রয়ে গিয়েছিল। মুস্তাফিজের স্লোয়ার আর কাটারগুলোর কোন জবাব ছিলনা তিন মুড়লের এক মুড়ল অসিদের কাছে। তবে এটা বলতেই হয় মুস্তাফিজকে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছেন ক্যাপ্টেন কুল মাহামুদউল্লাহ। অনুনেয়ভসবে পরিস্থিতির কারনে মুস্তাফিজুকে আগের ম্যাচের তুলনায় একটু আগেভাগে আনেন। আর সেই সিদ্ধান্তই বালদেশকের পক্ষে মুমেন্টাম নিয়ে আসে। মুস্তাফিজ তার স্প্যালে মোট ১৫ টি ডট বল করেছেন যা খুব স্বাভাবিকভাবে অস্ট্রেলিয়ানদের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করেছে। ২৪ বলে রান দিয়েছেন মাত্র ৯। তার নামের পাশে একটা উইকেটও থাকত যদিনা শরিফুল তার দ্বিতীয় ওভারে সহজ ক্যাচ ফেলে না দিতেন।

সিরিজ যতই সামনে গড়িয়েছে মুস্তাফিজুর ততই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটম্যানদের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠেছেন।  সিরিজ জুড়েই অস্ট্রেলিয়ানদের ভুগিয়েছেন স্লোয়ার আর কাটারের ক্যারিশমতিতে। 

সাহসী শরিফুল

ম্যাচের গুরুত্তপুর্ন সময়ে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ায় শরিফুলের উপর চাপ ছিল। কিন্তু শরিফুল চাপকে পাত্তা না দিয়ে ৫০ করে খেলা মিচেল মার্শ ও হ্যানরিক্সকে ফিরিয়েছেন। প্রতি ম্যাচে তিনি দলের প্রয়োজনে মূল্যবান ভূমিকা রেখেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ম্যাচে শরিফুল ৬ উইকেট নিয়েছেন ১২.৫০ গড়ে। এই সিরিজে তার পারফরম্যান্স হয়তবা মুস্তাফিজের আড়ালে চলে গেছে । কিন্তু দলের দরকারে খুবই কার্যকরী বোলিং করেছেন।

শেষ কথা

বাংলাদেশ প্রথমবারের মত কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হারালো। এই সিরিজের ফলাফল অস্ট্রেলিয়ানদের মোটেও হজম হবেনা। বাংলাদেশে না আসার জন্য এতদিন অনেক টাল-বাহানা করেছে। বাংলাদেশ এই সিরিজ হারিয়ে এত দিনের অবহেলার যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছে। এই জয়টি বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ প্রত্যাশিত মানের ক্রিকেট খেলতে পারছিলনা। এই সিরিজ অবশ্যই টাইগার ক্যাম্পে অনেকটা স্বস্তি এনে দিবে। তাছাড়া সামনে নিউজিল্যান্ডে আসছে বাংলাদেশে খেলতে এই সিরিজ জয় অবশ্যই বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিবে। তাছাড়া অক্টোবরে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে এই সিরিজের সাফল্য অবশ্যই বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার প্রেরনা দিবে।

ব্লগ পোস্টটি লিখেছেনঃ শিবতোষ ভট্টাচার্য্য

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *