বাংলাদেশে পেঁয়াজের ভালো ফলনে বিপাকে ভারতীয় চাষিরা
দেশে পেঁয়াজের ফলন বাড়ছে। সে কারণে ভারত থেকে পণ্যটির আমদানির প্রয়োজন পড়ছে না। এতে ভারতের চাষিরা এ বছর পেঁয়াজ নিয়ে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছেন দাবি দেশটির কৃষক নেতাদের।
গত কয়েক বছরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি মাঝেমধ্যেই অনিশ্চয়তার পড়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি জোর দেওয়া হয়। কৃষি খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় বাংলাদেশের কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। তাতে উৎপাদন বাড়ছে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমতে শুরু করেছে।
এ বছর অবশ্য ভারতেও পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আগের মতো রপ্তানি করতে না পারায় ভারতীয় চাষিরা পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অন্যদিকে দেশীয় চাষিদের সুরক্ষা দিতে গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশের সরকার। পেঁয়াজ আমদানি অনুমোদনের (আইপি) মেয়াদ নতুন করে বাড়ানোর চিন্তা আপাতত সরকারের নেই বলে জানা গেছে।
পেঁয়াজের উৎপাদন কতটা হচ্ছে
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদন পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা ২৮ লাখ টন অতিক্রম করে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। তার আগের বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ টন। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। অর্থাৎ, গত দুই অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকের আগ্রহের কারণেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। যেভাবে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, তাতে এবারও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সময়ে কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। বাড়তি ফলনের কারণে তাঁরা এ বছর পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না। পেঁয়াজের দাম এতটাই কমেছে যে কৃষকেরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় অনেক কৃষক মাঠেই ফসল নষ্ট করছেন।
ভারতের মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রদেশ আর গুজরাটেও পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বাজারেও ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি কমে গেছে। সব মিলিয়ে ভারতের পেঁয়াজচাষিরা এবার বেশ সমস্যায় পড়েছেন।
কী বলছেন ভারতীয় কৃষকেরা
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্টের (সিপিআইএম) কৃষক সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিষান সভার মহারাষ্ট্রের উপসভাপতি সি সুনীল মালুসারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর কলকাতা সংবাদদাতা শুভজিৎ বাগচী। কৃষকনেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সমস্যাটি কতটা প্রকট হয়েছে ভারতীয় কৃষকদের জন্য।
সি সুনীল মালুসারে বিষয়টির ব্যাখ্যা করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজ মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে আসতে শুরু করে। তখন পুরোনো পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। ভারতের সরকারি সংস্থা অ্যাগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি বা এপিএমসি যে দামে পুরোনো পেঁয়াজ কিনেছিল, তা কৃষকদের বিরাট সর্বনাশ করেছে। কারণ, উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকার বেশি হলেও, প্রতি কেজি ৪, ৫ বা ৬ টাকা পাওয়া গিয়েছে সরকারের থেকে অনুদান বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) হিসেবে।’
সি সুনীল মালুসারে আরও বলেন, এখন নতুন পেঁয়াজ আসছে। বাজারে পুরোনো পেঁয়াজের তুলনায় নতুন পেঁয়াজ অনেক বেশি মাত্রায় আসে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার টন এসেও গেছে। এবার অবশ্য সরকার একটু বেশি দর (কুইন্টালপ্রতি ৮০০ টাকা) দিচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ না প্রতি কুইন্টালে ১ হাজার ২০০ টাকা দেবে, ততক্ষণ কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাবেন না।
এমন অবস্থায় ভারতের কৃষকদের বেসরকারি বাজারের ওপরে নির্ভর করতে হয় উল্লেখ করে সি সুনীল মালুসারে বলেন, বেসরকারি বাজারের মধ্যে প্রধান একটি বাজার হলো বাংলাদেশ। কিন্তু তারা পেঁয়াজ নেওয়া বন্ধ করেছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তবে ভারতের কৃষকেরা আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। বাংলাদেশ যদি পুরো মৌসুম পেঁয়াজ না নেয়, তাহলে কৃষক তো বটেই, বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরাও বড় ক্ষতির মধ্যে পড়বেন।
EN
বাণিজ্য
বাংলাদেশে পেঁয়াজের ভালো ফলন যেভাবে ভারতীয় চাষিদের বিপাকে ফেলেছে
বাণিজ্য ডেস্কঢাকা
আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ৩২
বাংলাদেশে বছর দুয়েক ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি হচ্ছে। তাতে কিছুটা হলেও বিপাকে ফেলেছে ভারতীয় চাষিদের।
বাংলাদেশে বছর দুয়েক ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি হচ্ছে। তাতে কিছুটা হলেও বিপাকে ফেলেছে ভারতীয় চাষিদের।ছবি: সংগৃহীত
দেশে পেঁয়াজের ফলন বাড়ছে। সে কারণে ভারত থেকে পণ্যটির আমদানির প্রয়োজন পড়ছে না। এতে ভারতের চাষিরা এ বছর পেঁয়াজ নিয়ে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছেন দাবি দেশটির কৃষক নেতাদের।
গত কয়েক বছরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি মাঝেমধ্যেই অনিশ্চয়তার পড়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি জোর দেওয়া হয়। কৃষি খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় বাংলাদেশের কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। তাতে উৎপাদন বাড়ছে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমতে শুরু করেছে।
এ বছর অবশ্য ভারতেও পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আগের মতো রপ্তানি করতে না পারায় ভারতীয় চাষিরা পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অন্যদিকে দেশীয় চাষিদের সুরক্ষা দিতে গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশের সরকার। পেঁয়াজ আমদানি অনুমোদনের (আইপি) মেয়াদ নতুন করে বাড়ানোর চিন্তা আপাতত সরকারের নেই বলে জানা গেছে।
পেঁয়াজের উৎপাদন কতটা হচ্ছে
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদন পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা ২৮ লাখ টন অতিক্রম করে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। তার আগের বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ টন। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। অর্থাৎ, গত দুই অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকের আগ্রহের কারণেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। যেভাবে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, তাতে এবারও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সময়ে কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। বাড়তি ফলনের কারণে তাঁরা এ বছর পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না। পেঁয়াজের দাম এতটাই কমেছে যে কৃষকেরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় অনেক কৃষক মাঠেই ফসল নষ্ট করছেন।
ভারতের মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রদেশ আর গুজরাটেও পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বাজারেও ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি কমে গেছে। সব মিলিয়ে ভারতের পেঁয়াজচাষিরা এবার বেশ সমস্যায় পড়েছেন।
কী বলছেন ভারতীয় কৃষকেরা
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্টের (সিপিআইএম) কৃষক সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিষান সভার মহারাষ্ট্রের উপসভাপতি সি সুনীল মালুসারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর কলকাতা সংবাদদাতা শুভজিৎ বাগচী। কৃষকনেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সমস্যাটি কতটা প্রকট হয়েছে ভারতীয় কৃষকদের জন্য।
সি সুনীল মালুসারে বিষয়টির ব্যাখ্যা করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজ মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে আসতে শুরু করে। তখন পুরোনো পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। ভারতের সরকারি সংস্থা অ্যাগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি বা এপিএমসি যে দামে পুরোনো পেঁয়াজ কিনেছিল, তা কৃষকদের বিরাট সর্বনাশ করেছে। কারণ, উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকার বেশি হলেও, প্রতি কেজি ৪, ৫ বা ৬ টাকা পাওয়া গিয়েছে সরকারের থেকে অনুদান বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) হিসেবে।’
সি সুনীল মালুসারে আরও বলেন, এখন নতুন পেঁয়াজ আসছে। বাজারে পুরোনো পেঁয়াজের তুলনায় নতুন পেঁয়াজ অনেক বেশি মাত্রায় আসে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার টন এসেও গেছে। এবার অবশ্য সরকার একটু বেশি দর (কুইন্টালপ্রতি ৮০০ টাকা) দিচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ না প্রতি কুইন্টালে ১ হাজার ২০০ টাকা দেবে, ততক্ষণ কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাবেন না।
এমন অবস্থায় ভারতের কৃষকদের বেসরকারি বাজারের ওপরে নির্ভর করতে হয় উল্লেখ করে সি সুনীল মালুসারে বলেন, বেসরকারি বাজারের মধ্যে প্রধান একটি বাজার হলো বাংলাদেশ। কিন্তু তারা পেঁয়াজ নেওয়া বন্ধ করেছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তবে ভারতের কৃষকেরা আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। বাংলাদেশ যদি পুরো মৌসুম পেঁয়াজ না নেয়, তাহলে কৃষক তো বটেই, বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরাও বড় ক্ষতির মধ্যে পড়বেন।
বাংলাদেশে বাজার পরিস্থিতি
স্থানীয় উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের বাজারে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার ছাপ নেই। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি