সিসিক নির্বাচন : সিলেটে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো ধরণের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা বিএনপির অনেক আগের। তবে বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রের ব্যানারে সিটি নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হবেন এমন গুঞ্জন ছিল সিলেটজুড়ে। তাই সিটি নির্বাচনের আলোচনার মধ্যমণি ছিলেন তিনি।

কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণায় আরিফ জানান দেন, দল নয়- নির্বাচন বর্জন করবেন তিনি। আরিফের এই ঘোষণার পর নগরবাসীর কাছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন ‘পানসে’ হয়ে দাঁড়ায়। সবার ধারণা ছিল বিএনপি ও আরিফবিহীন নির্বাচন হবে একতরফা। খালি মাঠে গোল দেবেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

কিন্তু সময়ের সাথে পাল্টেছে দৃশ্যপট। জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। আভাস মিলছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। চুপ মেরে বসে থাকা ভোটাররাও ধীরে ধীরে সরব হচ্ছেন। এতে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাও স্পষ্ট হচ্ছে।

সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম। এর মধ্যে জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণায় অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। নগরীতে তাদের প্রচারণা খুব একটা চোখে পড়ার মতো নয়। ভোটের মাঠে এখন আনোয়ারুজ্জামান, বাবুল ও মাহমুদুল হাসানকে নিয়েই জোর আলোচনা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলে নেতাকর্মীদের মাঝে স্বস্তি দেখা দেয়। নগরবাসীরও ধারণা ছিল ভোট হবে একতরফা। অনেকটা বাধাহীনভাবে নির্বাচনী বৈতরণী উতরে যাবেন আনোয়ারুজ্জামান। শুরুতে ভোটের পরিস্থিতিও ছিল তেমন। ভোটাররাও ছিলেন নিরব। আনোয়ারুজ্জামানের প্রচারণার গতির সাথেও তাল মিলাতে পারছিলেন না বাবুল ও মাহমুদুল। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ধীরে ধীরে গতি বাড়ে বাবুল ও মাহমুদুলের। তাদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীও একজোট হয়ে মাঠে নামেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইতে থাকেন এ দুই প্রার্থী। প্রচারণায় গতি আসায় ফলও আসে ইতিবাচক। সরকার তথা নৌকাবিরোধী ভোটাররা সরব হতে থাকেন। তাদের সমর্থন বাড়তে থাকে লাঙ্গল ও হাতপাখায়। ফলে নৌকার সাথে এই দুই প্রতীকেরও নির্বাচনী আওয়াজ বাড়তে থাকে। বাবুল ও মাহমুদুলের নৌকা বিরোধী প্রচারণা প্রভাব ফেলতে শুরু করে ভোটারদের মাঝে। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থানও শক্ত করে নিচ্ছেন তারা।

সূত্র জানায়, গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল দেখে সিলেটের নেতাকর্মীদের মাঝে নিরব ভোট বিপ্লবের আতঙ্ক দেখা দেয়। সেই আতঙ্ক দূর করতে কেন্দ্র থেকে নেতারা এসে দলের নেতাকর্মীদের  ঐক্য আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার হ্যাট্টিক পরাজয় কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। গাজীপুরের ঘটনার পুণরাবৃত্তি হলে সিলেট আওয়ামী লীগের অবস্থা রংপুরের মতো হবে’- কেন্দ্রীয় নেতারা এভাবে সতর্কও করে যাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। তাই নৌকার পক্ষে সিলেটে প্রচারণাও জোরদার হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল মনে করছেন, সিলেটে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা থাকলেও নজরুল ইসলাম বাবুল ও মাওলানা মাহমুদুল হাসানের মুল চ্যালেঞ্জ হবে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি। কর্মী সংকটের কারণে সাধারণ সমর্থক ও ভোটারদের তারা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন কি-না এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নৌকার পক্ষের ভোটারদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের শিকার হয়ে আজ ভূক্তভোগী দেশের মানুষ। এই সিলেটের মানুষ আওয়ামী লীগের মেয়র দেখেছে। তাদের শাসনও দেখেছে। তাই নগরবাসী আর সরকার দলীয় মেয়র দেখতে চাইছেন না। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেউই সিলেট নগরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তারা নির্বাচনী নেতা। ভোট শেষ হওয়ার পর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ আছে। তাই সবদিক বিবেচনা করে মানুষ তাদের পছন্দের প্রতীক হিসেবে হাতপাখাকে বেছে নিয়েছে। হাতপাখার পক্ষে জোয়ার ওঠেছে।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘এই সরকার কিংবা সরকার দলীয় প্রার্থীর উপর সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। মানুষ বিকল্প খুঁজছে। তারা চাইছে জাতীয় পার্টির মতো দেশদরদী দলের প্রতিনিধি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ২১ জুন বিপুল ভোটের ব্যবধানে লাঙ্গল বিজয়ী হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের মানুষ উন্নয়নে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উন্নয়নে বিশ্বাস করেন। তাই সিলেটের উন্নয়নের জন্য তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজের জন্য নগরবাসী এর সুফল পাননি। একটি পরিকল্পিত নগরীর প্রত্যাশায় নগরবাসী নৌকা প্রতীক বেছে নিয়েছে। নগরজুড়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *