বড়লেখায় সাপে নয় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল কলেজ ছাত্র সাইফুরকে

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

মৃত্যুর পর প্রচার হয়েছিল কলেজ ছাত্র সাইফুর সাপের ছোবলে মারা গেছেন। ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে শ্বাসরোধে হয়ে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের মো. আনছার আলীর ছেলে কামাল হোসেন (২০), জবলু হোসেন (২৪) ও বাবুল হোসেন (২৬)। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের বাড়ির কক্ষ থেকে সাইফুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। নিহত সাইফুর রহমান বর্ণি ইউনিয়নের সৎপুর গ্রামের মো. আব্দুল আহাদের ছেলে।

সূত্র জানায়, সাইফুর কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিপ্লোমা পাশ করেন। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ৩০ জুলাই প্রায় ২ বছর পর তিনি সিলেট থেকে বাড়ি আসেন। রাতের খাবার খেয়ে পাশের গ্রামের মামা বাড়িতে যান। রাতে মামার বাড়ি থাকা অবস্থায় এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন সাইফুরকে ফোন করে জরুরী কাজের কথা বলে দেখা করতে বলেন। কামালের ফোন পেয়ে সাইফুর তার সাথে দেখা করতে যান। রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন স্বজনরা তার সাথে (সাইফুরের সাথে) যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তার ফোন বন্ধ পান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এলাকার বাসিন্দা জয়নাল সাইফুরের বাবাকে ফোন করে জানায় নতুন বাড়ির (সাইফুরদের নতুন বাড়ি) একটি কক্ষের মেঝেতে সাইফুরের মৃতদেহ পড়ে আছে। এরপর এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়। এলাকায় প্রচার করা হয় সাইফুর সাপের কামড়ে মারা গেছেন। এরপর সাইফুরের স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাইফুরের স্বজনরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে সিলেট কোতোয়ালী থানার পুলিশ ২ আগস্ট হাসপাতালে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে লাশ সাইফুরের লাশ দাফন করা হয়।

ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর গত ২৬ অক্টোবর (সোমবার) হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বড়লেখা থানা পুলিশের কাছে আসে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সাইফুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর নিহতের ভাই মো. এমদাদুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি রেখে একটি মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার রাতেই পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত মো. আনছার আলীর ছেলে কামাল হোসেন (২০), জবলু হোসেন (২৪) ও বাবুল হোসেনকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে।

নিহতের ভাই মো. এমদাদুর রহমান বলেন, ‘ভাই ২ বছর পর ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে আসেন। রাতের খাবার খেয়ে মামা বাড়ি যান। রাতে মামা বাড়ি থাকার কথা ভাইয়ের। এর আগে কামাল ভাইকে ফোন করে জরুরী কাজ আছে জানিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলেছিল। সকালে ভাই আমাদের বাড়িতে না ফেরায় তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাই। এর মধ্যে সকালে জয়নাল আব্বাকে ফোন করে বলে আমাদের নতুন বাড়ির ঘরে আমি নাকি ঘুমিয়ে আছি। আবার জয়নাল বিকেলে ফোন করে আব্বাকে বলে এখানে এমদাদ নয় সাইফুরের লাশ (নতুন বাড়ির ঘরে) পড়ে আছে। খবর পেয়ে সেখানে ভাইকে পাই। আমাদের দুটি বাড়ি। আব্বা সিলেট থাকায় জয়নালের কাছে আমাদের নতুন বাড়ির ঘরের চাবি ছিল। জয়নাল গংরা প্রথম থেকেই সাপের কাটায় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে। কিন্তু তাদের এমন কথায় আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর আমরা ভাইকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। ভাইয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদনেও জখম পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। আমি থানায় মামলা করেছি।’

থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, ‘সোমবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থানায় আসে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সাইফুরকে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। এরপর নিহত সাইফুর রহমানের ভাই মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *