সিলেটে এবার অন্যরকম ‘রেড জোন’

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

দেশে প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনা সংক্রমণের মাঝামাঝি সময়ে (গত বছরে) সিলেট একদফা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। করোনার পর এবার ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে আবারও ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হলো সীমান্তবর্তী সিলেট অঞ্চল।

সিলেটে গত শনি ও রোববার কয়েক দফায় ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয় বিশেষজ্ঞদের মতামত সভায় এ তথ্য জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত এ ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, চুয়েটের সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, জিওটেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী এবং শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম।

ভূমিকম্পের আশংকায় সিসিকের দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে তাদের দেয়া পরামর্শসমূহের মধ্যে ছিলো- সিলেট নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যােগ নেওয়া উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প হলে করণীয় বিষয়ে নিয়মিত মহড়া আয়োজন, ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে প্রচারণা অব্যাহত রাখা, ইমারত নির্মাণ আইনানুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা এবং সিলেটে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি।

সভার প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, নাগরিকদের সচেতন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে হবে। নাগরিকরা আতঙ্কিত না হন সেজন্য প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় সিলেট আছে উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, সিলেটে আগে টিনের একতলা বাড়ি বেশি ছিল। এখন বহুতল ভবন হচ্ছে, ঝুঁকিও বাড়ছে। তবে এবারের ভূমিকম্প পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের দ্রুত উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক এই অনিশ্চিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সরকার সোচ্চার রয়েছে।

বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সিলেট ভূমিকম্পের রেড জোনে রয়েছে। তাই এখানকার প্রস্তুতিটাও নিতে হবে সেদিক বিবেচানায় রেখে। বিশেষজ্ঞদের মতামত এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। এজন্য আগাম প্রস্তুতিমূলক এই বিশেষজ্ঞ মতামত সভা অত্যন্ত সময়োপযোগী।

তিনি বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় এ অঞ্চলে উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। সিলেটে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক কার্যালয় করতে হবে। যেখানে উদ্ধার কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম মজুদ থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প হলে করণীয় বিষয়ে নিয়মিত মহড়া আয়োজন, ইমারত নির্মাণ আইনানুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা তা তদারকি বাড়াতে সিসিকের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, সিলেট শহরে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্ভর পানি চাহিদা পূরণের দিকে যেতে হবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে।

সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে দুর্যোগকবলিত মানুষের উদ্ধারে বেশি নজর দিতে হবে। সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ের সক্ষমতা এবং দুর্যোগে ত্রাণ কিংবা চিকিৎসা নিয়ে আসা বিমান/হেলিকাপ্টার কতোটি নামতে পারবে, সে তথ্যও পরিকল্পনায় রাখতে হবে।

চুয়েটের সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধারণা করা হয় ডাউকি চ্যুতিতে কম্পন হলে সেটি ৮ মাত্রার হতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে, এখনই উদ্যোগ নিলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ সব দপ্তর ও শাখাকে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রণীত গাইড লাইন অনুসরণ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নগরের সব ভবন অ্যাসেসমেন্ট করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে হবে। সে অনুযায়ী ভবনগুলোকে ঝুঁকি মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী বলেন, এখনও সময় আছে। চাইলে ৬ মাসের মধ্যেই সিলেট নগরীর সব ভবন এসেসমেন্ট করে ফেলা সম্ভব। ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কমাতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞ বক্তা শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম সভার শুরুতে সিলেট নগরীতে ঘন ঘন ভূমিকম্প চ্যুতি ও শহরের পানির স্থর নেমে যাওয়ার উপর আলোচনা ও মতামত ব্যক্ত করেন।

ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস সিলেটের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আনিসুর রহমান ও সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *