আদর করে ডেকে নিয়ে ৩ বছরের শিশুকে বটি দিয়ে টুকরা টুকরা করে কেসমত

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:

গ্রামে গ্রামে কাপড় বিক্রি করে ৬৫ বছর বয়সী কেসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকির। কিন্তু মানুষ খুন করাই যেন তার নেশা। পর পর দুইটি খুন করেছে ওই বৃদ্ধ।

গত ১৭ মার্চ উপজেলা শহরের দরগাপাড়ার সবজি বিক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন টুকু মিয়ার ৩ বছরের মেয়ে জান্নাতুন নিসাকে আদর করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে বটি দিয়ে টুকরা টুকরা করে কেসমত ফকির। এর পর গত ২৪ মার্চ যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি এলাকার একটি বাড়িতে প্রকাশ্যে দা দিয়ে হত্যা করে সুহাসিনী (৬৫) নামের এক বৃদ্ধাকে।

পুলিশ সূত্র জানায়, জান্নাতুন নিসাকে নির্মমভাবে হত্যার পর থেকে পুলিশ কেসমত ফকিরকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না তার। পরে স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খুনের খবরের সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে ঝিনাইদহের একটি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে কেসমত ফকির। ওই জবানবন্দির বর্ণনায় উঠেছে এসেছে কোটচাঁদপুরের শিশু জান্নাতুন নিসার হত্যার আসল রহস্য।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের দরগাপাড়ার সবজি বিক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন টুকু মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া ফেরিওয়ালা রাজবাড়ির কেসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকির। চলতি বছরের ১৭ মার্চ বিকালে বাড়িতে একা ছিল মেয়ে জান্নাতুন নিসা। সে বাড়ির মালিকের ছোট মেয়ে।

১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে কেসমত ফকির জানায়, অবুঝ শিশু জান্নাতুনকে প্রথমে আদর করে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে যায় সে। পরে ঠাণ্ডা মাথায় ধারালো বটি দিয়ে টুকরা টুকরা করে হত্যা করে।

সে জানায়, তোফাজ্জল হোসেন টুকু মিয়ার আরেক স্ত্রীর ছেলে ইউসুফ। ইউসুফের স্ত্রী সালমা বেগম। পাশাপাশি বাড়িতেই থাকে তারা। ছোট শাশুড়িকে শায়েস্তা করতে জান্নাতুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। কেসমত ফকিরকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় কাজটি করতে রাজি হয়। এরপর সুযোগমতো নির্মমভাবে হত্যা করা হয় নিষ্পাপ জান্নাতুনকে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল ঘাতক কেসমত ফকির। প্রকৃত নাম ঠিকানা কিংবা ছবি না থাকায় কিছুতেই তাকে ধরা সম্ভব হচ্ছিল না।

পুলিশ সুপার জানান, গত ২৪ মার্চ অভয়নগরের ধোপাদি এলাকার সুহাসিনী (৬৫) নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে কাপড় বিক্রির সময় কথা কাটাকাটির জেরে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা হাতে নাতে ফেরিওয়ালা বেশে থাকা কেসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকিরকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে আহত ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। অভয়নগর থানায় দস্যুতাসহ একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

ফেরিওয়ালার বেশে মানুষ খুনের এ খবর স্থানীয় একটি পত্রিকায় ছাপানো হয়। ওই খবরের সূত্র ধরে অভয়নগর থানা পুলিশের কাছ থেকে কেসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকিরের ছবি সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ। সেই ছবি দেখানো হয় নিহত জান্নাতুন নিসার বাবাকে দেখানো হলে তাকে শনাক্ত করেন তিনি। এরপর জান্নাতুন হত্যা মামলায় কেসমত ফকিরকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর থানার ওসি মো. মাহবুবুল আলম। আদালত দুইদিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।

বৃহস্পতিবার তাকে যশোর সেন্ট্রাল জেল থেকে ঝিনাইদহে আনা হয়। শুক্রবার সে ১৬৪ ধারায় স্থানীয় আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সে। তার বর্ণনা শুনে বিচারকসহ পুলিশ কর্মকর্তারা চমকে ওঠেন।

এদিকে পুলিশ জানায়, কেসমত ফকিরের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে কোটচাঁদপুর উপজেলা শহর থেকে সালমাকে আটক করা হয়েছে।

সুত্র: যুগান্তর
শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *