স্থানীয় নির্বাচনের অনুভূতি ও অভিব্যক্তি -ছিদ্দিক রহমান

স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ। আগামী ২৬শে ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে একজন কর্মী হিসেবে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা এবং দলীয় প্রতীকে ভোট দেয়া আমাদের আদর্শিক দায়িত্ব। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে স্বাধীনতার প্রতীক, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সম্বলিত নৌকার পক্ষে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

২০০৯ সাল থেকে আমি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে কাজ করে আসছি। তখন স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছিল না, তবে দলের মনোনীত প্রার্থী ছিল। ‘৯ সালে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘রিক্সা’ প্রতীকে দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত আব্দুল খালিক মায়ন ভাই। আমরা তাঁর পক্ষে কাজ করি এবং তাঁকে ভোট প্রদান করি। তখন তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ‘১১ সালে ইউপি নির্বাচনে সংগঠনের কর্মী হিসেবে দলের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য কাজ করি। ‘১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূল ভোটে মনোনীত আনারস প্রতীকে দলীয় প্রার্থী জনাব আতাউর রহমান খাঁন ভাইয়ের পক্ষে কাজ করি এবং তাঁকে ভোট প্রদান করি। সে সময় তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

‘১৬ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ইউপি নির্বাচনে নৌকার জন্য কাজ করি। মুড়িয়া ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সামছ উদ্দিন মাখন ভাই ও শেওলা ইউনিয়নে জহুর উদ্দিন ভাইয়ের পক্ষে নিরলস পরিশ্রম করি। বিশেষ করে উক্ত নির্বাচনে শেওলা ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ছালেহ আহমদ বাবুল ভাই ও হারুনুর রশীদ দিপু ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা কাজ করি এবং নির্বাচনে বিভিন্ন সভায় নৌকার পক্ষে বক্তৃতাও করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মুড়িয়া ইউনিয়নে নৌকা হারলেও শেওলায় নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়।

‘১৭ সালে প্রথমবারের মত স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করার সৌভাগ্য লাভ করি। তখন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিয়ানীবাজার পৌরসভার কাংঙ্ক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের প্রিয়নেতা তারুণ্যের কণ্ঠস্বর মোঃ আব্দুস শুকুর ভাইকে নৌকার মাঝি মনোনীত করেন। আমরা নৌকার জন্য নিরন্তর কাজ করি এবং শুকুর ভাইয়ের বিজয় নিশ্চিত করি। ফলে তিনি বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।

‘১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জনাব আতাউর রহমান খাঁন নৌকার প্রার্থী মনোনীত হন। আমরা হাতেগুনা কিছু নেতা-কর্মী নৌকার পক্ষে কাজ করি এবং তাঁকে ভোট প্রদান করি। কিন্তু দলের বেশ কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মীদের বিরোধী অবস্থানের কারণে নৌকা পরাজিত হয়। এভাবে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে দলের মধ্যে একটি বড় অংশ নৌকার বিপরীতে অবস্থান নেয়। যার মূল কারণ হলো আঞ্চলিকতা, গ্রুপিং, স্বজনপ্রীতি এবং সাম্প্রদায়িকতা।

আমি অন্তত; ছাত্রলীগের ভাইদের বলি, সারা বছর রাজপথে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে নির্বাচনে জগ-মগ-কলস কিংবা ঘোড়ার পিছনে দৌড় দিও না। মনে রেখো, তুমি নিজের খেয়ে রাজনীতির মাঠে আসো। রক্ত যায় তোমার, ঘাম ঝরে তোমার, অর্থ যায় তোমার সুতরাং কার কথায় তুমি নৌকার বিরুদ্ধে যাবে? একবার ভেবে দেখো! যে ভাই, যে নেতা তার স্বার্থে তোমাকে দলীয় আদর্শ পরিপন্থি কাজে লিপ্ত করছে, সে কেমন নেতা? তাদের জন্য কি তুমি নৌকার বিরুদ্ধে যাবে? তোমার গ্রুপের বড় ভাই প্রার্থী, তোমার গ্রামের প্রার্থী, তোমার আত্মীয়-স্বজন প্রার্থী। তাদের সাথে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকুক। পক্ষান্তরে নৌকার পক্ষে তোমার অবস্থানটাও দৃঢ় থাকুক।

স্থানীয় নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে, সেহেতু দলই মূখ্য বিষয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শুধুমাত্র একেকজন ব্যক্তি। তারা হারলে ব্যক্তি হারবে কিন্তু নৌকা হারলে দল হারবে। তাই ব্যক্তির চেয়ে আমাদের কাছে দল বড়। যেহেতু আমরা দলের রাজনীতি করি তাই নির্বাচনে দলের বিজয়ই আমাদের রাজনৈতিক বিজয়। রাজনৈতিক নির্বাচনে আঞ্চলিকতার চেয়ে দলীয় আদর্শ বড় হওয়া উচিত। সাধারণ ভাবে চিন্তা করে দেখুন; আপনি দলের কর্মী, আর নির্বাচন দলীয় প্রতীকে, তাহলে আপনার ভোট কোথায় দেয়া উচিত?

রাজনীতি মানে মানব কল্যাণ। মানুষের জন্য কাজ করতে হলে বড় মনের অধিকারী হতে হয়। মহৎপ্রাণ ও হৃদয়বান হতে হয়। রাজনীতিতে সবচেয়ে খারাপ দিক হলো স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধি হাসিলের লক্ষে বৃহতাংশের ক্ষতি করা। কারণ এটা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, নি:স্ব করে দেয়। চলমান গ্রুপিং, আঞ্চলিকতা, সাম্প্রদায়িকতা ও স্বজনপ্রীতি প্রতিনিয়ত আমাদের সংকীর্ণ করে দিচ্ছে। আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। তাই, কে-কোন গ্রুপের, কোন গ্রামের, তা না দেখে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করবো।

আমাদের মনে রাখা উচিত; আমরা এই প্রজন্মের প্রত্যেকে সুদিনের ছাত্রলীগ কর্মী। আমরা বলি আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর চেতনা ধারণ করে শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এত সুদিন পেয়েও দলীয় আদর্শিক পরীক্ষায় হাতে গুনা কিছু সংখ্যক কর্মী ব্যতীত অনেকেরই অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ! দুঃসময়ের আন্দোলন সংগ্রাম আমরা পাইনি। কিন্তু বর্তমানে আদর্শিক প্রতীক নৌকার জন্য সংগ্রাম করে প্রাণের নেত্রীকে বিজয় উপহার দেয়ার সুযোগ পেয়েছি।

আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আসন্ন ইউপি নির্বাচনে যাদেরকে নৌকা প্রতীক উপহার দিয়েছেন, তাদের পক্ষে আমরা কাজ করবো। যদি তারা আমাদের অপছন্দের পাত্র হয়, তারপরও আমরা ভোট দেবো। কারণ তাদের নামের পাশে প্রতীকটা যে নৌকা। আর এটাই আমাদের দলীয় আদর্শ। নৌকার বিজয়ের মধ্যদিয়ে দলের আদর্শিক ভীতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। নৌকায় ছিলাম, আছি, থাকবো, ইনশাআল্লাহ।

২৬ ডিসেম্বর সারাদিন
নৌকা মার্কায় ভোট দিন।
‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *