সিলেটের হাসপাতালে সিট নেই, অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছেন করোনা রোগী

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

বেলা আড়াইটা। সিলেটের কোভিড ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সামনে এসে থামে একটি অ্যাম্বুলেন্স। রোগী নামানোর আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন সিট খালি নেই। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর বাবার শরীরে হাত বুলিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন ছেলে। একটাই আকুতি ‘বাবার জন্য একটি আইসিইউ বেড। আইসিইউ না মিললে অন্তত একটি সাধারণ সিট’। কিন্তু ১শ’ শয্যার শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল পূর্ণ রোগীতে। তাই বাবার নিথর দেহের পাশে বসে চিৎকার করা ছেলের মতো অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। শেষ চেষ্টা হিসেবে ওই রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করে জানালেন অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেছেন তিনি।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে আসা কোভিড আক্রান্ত মুহিবুর রহমানকে নিয়ে এভাবেই তার স্বজনরা গতকাল শনিবার ঘুরেছেন হাসপাতালে হাসপাতালে। কিন্তু কোথাও পাননি আইসিইউ বা সাধারণ একটি সিট। ফলে অ্যাম্বুলেন্সেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে তাকে। গেল তিন-চারদিন থেকে সিলেটে এরকম ঘটনা ঘটছে অহরহ। হাসপাতালে সিট না পেয়ে কেউ মারা যাচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্সে, আবার চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে কেউ ফিরছেন বাসায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে কোভিড চিকিৎসার জন্য রয়েছে প্রায় ৮শ’ শয্যা। আর আইসিইউ বেড রয়েছে ১২১টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে কোভিড ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ৮৪টি সাধারণ শয্যা ও ১৬টি আইসিইউ শয্যা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ড মিলে ১৬৫টি সাধারণ ও ৮টি আইসিইউ শয্যা এবং খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১টি করে সাধারণ আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সকল হাসপাতাল মিলে প্রায় সাড়ে ৪শ’ সাধারণ ও ৯৭টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।
গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি কোন হাসপাতালেই সিট খালি নেই। ফলে রোগীদেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কোন রোগী সুস্থ হলে বা মারা গেলে তবেই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন নতুন রোগী। ভর্তি হতে না পেরে কেউ কেউ হাসপাতালগুলোতে নাম নিবন্ধন করে যাচ্ছেন। কোন সিট খালি হলে ফোনে জানানোর জন্য অনুরোধ করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ওসমানী হাসপাতালে কোভিড ও কোভিড উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসার জন্য তিনটি ওয়ার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই তিন ওয়ার্ডে ১৬৫টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া ৮টি শয্যাযুক্ত আইসিইউ’র একটি ইউনিট কোভিড চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গেল তিন-চারদিন ধরে কোভিড ওয়ার্ডের সকল সিট রোগীতে পূর্ণ। নির্ধারিত ওয়ার্ড ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডেও কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. চয়ন রায় জানান, হাসপাতালে কোন সিট খালি নেই। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলে তবেই নতুন রোগী ভর্তি করার সুযোগ মিলছে।

সিলেট বেসরকারি হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ জানান, সিলেটের সবকটি বেসরকারি হাসপাতাল মিলে কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে চারশ’ সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ’র ৯৭টি শয্যা রয়েছে। বর্তমানে কোথাও সিট খালি নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *