ভ্যান চালককে লাঠি দিয়ে পেটালেন মেয়র!

সড়কের উপরে ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে এক ভ্যানচালককে লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে সিলেট নগরের নগরের চৌহাট্টা এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। এনিয়ে নগরে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছর নগরের চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর এই সড়ক দিয়ে রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করে সিসিক। অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাতে হকার বসা নিষেধ লিখে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়। তবে এসব নিষেধ অমান্য করে এই সড়কের ফুটপাত দখল করে আছে হকাররা। সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা হয় গাড়িও। ফলে সড়কজুড়ে যানজট লেগে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানা যায়, শনিবার দুপুর ২ টার দিকে চৌহাট্টার দিকে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন মেয়র আরিফ। এ সময় সড়কের পাশে একটি ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা দেখতে পান মেয়র। তখন তিনি গাড়ি থামিয়ে ওই ভানচালককে ডেকে এনে তার হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।

এই ঘটনার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সিলেট জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি সপ্ত দাস। তিনি মেয়রের বেত্রাঘাতের একটি ছবি ফেসবুকে আপ করেন। এরপর এনিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সপ্ত দাস ফেসবুকে লেখেন- ‘একজন সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছে পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মেয়রের গাড়ি, তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি দেন। কিন্তু একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিলো কিন্তু কবি সেখানে নীরব। এই শহরের অনেক রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের পিট খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।’

রুবেল আহমদ নামের ওই ভ্যানচালকের সাথে কথা বলেছে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর। তিনি সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভ্যান চালান। শনিবার দুপুরে ভ্যান নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সড়কে ভ্যান রেখে আমি পাশের দোকানে সিগারেট নিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়রকে দেখে দৌড়ে ভ্যান সরাতে আসি। কিন্তু তার আগেই মেয়র লাঠি দিয়ে আমার হাতে বাড়ি দেন।

ওই ভ্যান গাড়ির সাথে ছিলেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিক্রয় প্রতিনিধি ধ্রুব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমি পাশেই ছিলাম। মেয়র চালককে মারছেন দেখে দৌড়ে আসি। তিনি বলেন, মেয়র এই কাজটি ঠিক করেননি।

চৌহাট্টা এলাকার এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফুটপাতে বসার কারণে মেয়র প্রায়ই লাঠি দিয়ে আমাদের তাড়া করেন। হাতের কাছে পেলে মারেনও। শুধু মেয়র নয়, সিটি করপোরেশন কর্মচারীরাও অভিযানের নামে গায়ে হাত তুলে।

১৯০৯ সালের একটি আইনে বেত্রাঘাতের বিধান রয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, এই আইনে কাউকে বেত্রাঘাত করতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে দেশে এই আইনের প্রয়োগ নেই। এর বাইরে পুলিশ আইনে প্রয়োজনে লাঠিপেটার বিধান রয়েছে। এছাড়া কাউকে বেত্রাঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

দীর্ঘদিন সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন জ্যোতির্ময় সরকার। সম্প্রতি তাতে মহানগর পুলিশের উত্তর শাখায় বদলি করা হয়েছে। জ্যোতির্ময় বলেন, সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে ইঞ্জিনচালিত যানকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে ইঞ্জিনবিহীন যানের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে আমরা এসব যানকে অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে ন্যুনতম জরিমানা করে থাকি। তবে কাউকে মারধরের কোন আইন নেই।

তবে বেত্রাঘাতের কথা অস্বীকার করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি কেবল লাঠি দিয়ে তাকে ভয় দেখিয়েছি। এখন এটা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *