বিয়ানীবাজারে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ‘লাইভ সম্প্রচার’ বিড়ম্বনা!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ‘লাইভ সম্প্রচার’ বিড়ম্বনায় অতিষ্ট বিয়ানীবাজারের প্রশাসন। যখন বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়, তখন মোবাইলের ক্যামেরা অন করে জঠলা বাঁধিয়ে প্রশাসনের পিছু নেন এসকল সম্প্রচারকারী। এতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দায়িত্বশীল-অভিযানকারীরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি কোন নির্দেশণা না থাকায় অনেকসময় বিপাকে পড়তে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।

সূত্র জানায়, চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিয়ানীবাজারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের করা হচ্ছে জরিমানা, দেয়া হচ্ছে শাস্তি। তবে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে নামলে খবরটি চারিদিকে চাউর হয়। স্থানীয় বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভ সম্প্রচার শুরু করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিও নিজ উদ্যোগে সম্প্রচার শুরু করেন।

বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি সজীব ভট্রাচার্য জানান, শুধু বিয়ানীবাজার নয়, সারাদেশেই লাইভ সম্প্রচারকারীদের দৌরাত্ম বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে এদের সংখ্যা বেশী। তিনি বলেন, উপজেলায় লাইভ সম্প্রচারী অনলাইন পেইজের সংখ্যা একশ’ ছাড়িয়ে যাবে। তাদের কারো নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে না পারায় এরা আবেদন করেনি।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন পৌরশহরের উত্তর বাজারে অভিযান শুরু করলে দক্ষিণ বাজার জনশূণ্য হয়ে পড়ে। আবার দক্ষিণ বাজার থেকে অভিযান আরম্ভ হলে শহরের অন্যান্য এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন কোথাও উপস্থিত হলেই লাইভ সম্প্রচারকারীরা ভিড় জমান। এতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

বিয়ানীবাজারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, লাইভ সম্প্রচারকারীদের কারণে প্রশাসনের অনেক গোপনীয়তা রক্ষা পায়না। তাছাড়া যারা লাইভে কথা বলে এরাও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেনা। এতে প্রকৃত গণমাধ্যকর্মীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, এভাবে অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রচার চলতে থাকলে আমাদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারি কমিশণার (ভূমি) মুশফিকুন নূর জানান, ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালে অনেকে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সম্প্রচার শুরু করে। এতে আদালতের সাথে ওই ব্যক্তির কি কথা হচ্ছে, তাও তারা সবাইকে জানিয়ে দেয়। যা বেআইনী। তিনি বলেন, অভিযানকালে কখনো ৫০-৬০জন লাইভ সম্প্রচারকারী আমাদের পিছু নেয়। এতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হয়না।

সিলেট জেলা জজ আদালতের আইনজীবি এডভোকেট মো. আবুল কাশেম জানান, লাইভ সম্প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এরা মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও সম্প্রচার করা শুরু করে। যা মানবাধিকারের লঙ্গন। তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করেন।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক নূর স্বাস্থ্যবিধি মেনেচলাসহ ২৩ দফা বিষয়ে লোকজনকে অবহিত করেন। পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সোমবার পৌরশহরে সচেতনতা বৃদ্ধিও জন্য মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হয়।

অপরদিকে বিয়ানীবাজারে ম্যাজিস্ট্রেট যতক্ষণ অভিযানে মাঠে থাকেন ততক্ষণ মানুষ সতর্ক চলাফেরা করলেও অভিযান শেষে কিছু মানুষ কোন প্রয়োজন ছাড়া অযথা ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। তাছাড়া চলমান লকডাউনে এখানো পর্যন্ত গ্রামীণ এলাকা ও হাট-বাজারে কোন অভিযান চালায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফলে সেসব এলাকায় জনসমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৌরশহরসহ উপজেলার সর্বত্র দেদারছে চলছে সিএনজি অটোরিক্সা, টমটম, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত যানবাহন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *