বাবার লাশ উঠানে ফেলে রেখে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের ঝগড়া

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

বাবা মারা গেছেন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে। চলছিল রাতের মধ্যে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। এর মধ্যে পাঁচ সন্তানের মধ্যে জমি ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া লাগে। দিন পেরিয়ে সারা রাত চলে পরিবারের ঝগড়া। এমন চিত্র দেখে এলাকাবাসী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দেন। চেয়ারম্যান আজ বুধবার সকালে এসে সালিস বসিয়ে সন্তানদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত বাড়ির উঠানেই পড়ে থাকে লাশ। সালিসে সমঝোতা না হলে চেয়ারম্যান হস্তক্ষেপ করে দুপুরে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এর মধ্যে বড় ছেলের ফোন পেয়ে পুলিশ এসে লাশ রাজবাড়ী হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঘটনাটি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁচুরিয়া অম্বলপুর গ্রামের। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বেলা তিনটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন অম্বলপুর গ্রামের কৃষক ইয়াছিন মোল্লা (৮৮)। ইয়াছিন মোল্লার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বাবলু মোল্লা, ফুলবড়ু, রাবেয়া ও মমতাজের সঙ্গে ছোট ছেলে রহমান মোল্লার জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই বিরোধ চলছিল। বিরোধের জেরে পাঁচ সন্তান সারা দিনরাত জমি ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া করে বাবার লাশ দাফনে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

বাবলু মোল্লা, ফুলবড়ু, রাবেয়া ও মমতাজ অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন বাবা তাঁদের ছোট ভাই রহমান মোল্লার কাছে থাকতেন। এ সুযোগে তাঁর সব সম্পত্তি রহমান নিজের নামে লিখে নেন। এ নিয়ে রাজবাড়ীর আদালতে তাঁরা চার ভাইবোন একটি মামলা করেছেন। মামলায় গত সোমবার বাবাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিলেও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অসুস্থতার খবরে তাঁরা বাবাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে বললেও ছোট ভাই স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। তাঁদের ধারণা, রহমান ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবাকে মেরে ফেলেছেন।

ইয়াছিন মোল্লার ছোট ছেলে রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমি বাবাকে দেখভাল করতাম। গত শুক্রবার হঠাৎ বাবা অসুস্থ হলে গোয়ালন্দে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাই। এ সময় ডাক্তার কিছু টেস্ট ও ওষুধ লিখে দেন। বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে বলেন। তাই বাসায় রেখে চিকিৎসা করাই। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে বাবা আরও বেশি অসুস্থ হলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, পরিবারের প্রায় ৬০ শতক জমি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে বিরোধ চলছে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ইয়াছিন মোল্লা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছিলেন। গতকাল বিকেলে তিনি মারা গেলে তাঁর লাশ বড় ছেলে ও অন্যান্য বোন বাড়িতে তুলতে দেননি বলে ছোট ছেলে রহমান অভিযোগ করেন। আজ সকালে বাড়িতে গিয়ে লকডাউনের পর জমির সমস্যা সমাধান করা হবে মর্মে স্ট্যাম্পে তাঁদের উভয় পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে ইয়াছিন মোল্লার দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় পুলিশ উপস্থিত হয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী পাঠায়। জমি নিয়ে সন্তানদের বিরোধে প্রায় ২৭ ঘণ্টা দাফন নিয়ে কালক্ষেপণ চলে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধের কারণে প্রায় এক বছর ধরে ইয়াছিন মোল্লা ও তাঁর ছোট ছেলে রহমান মোল্লা বাড়িছাড়া। এখানে অন্য ছেলেমেয়েরা অভিযোগ করে আসছিলেন, কৌশলে রহমান জমি লিখে নিতেই বাবাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে আলাদা থাকছেন। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যাওয়ার পর ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সাতটায় নিজ বাড়িতে আনা হলে বাড়ির আঙিনায় দাফন সম্পন্ন হয়।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করেন। পরে একটি সাধারণ ডায়েরি মূলে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী হাসপাতালের মর্গে পাঠান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *