ধর্ষণের শিকার তরুণীকে বিয়ে করলেন ‘ছোটবেলার প্রেমিক’

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ 

ভালোবাসারা মরে না। বেঁচে থাকে আজীবন। কখনো তা সুপ্ত বা প্রকাশিত। আর তারই নিদর্শন দিলেন ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কুলতলির বাসিন্দা শুভঙ্কর ও তার প্রেমিকা। গত সোমবার কুলতলির পূর্ব গোপালগঞ্জে শুভঙ্করের বাড়িতেই চারহাত এক করা হয়। অনেক লড়াই করা, কষ্ট পাওয়া মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো করেই বাড়িতে তুলেছেন শুভঙ্করের বাবা ও মা।

ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কুলতলি ব্লকের পশ্চিম গোপালগঞ্জের বাসিন্দা শুভঙ্করের ভালোবাসার মানুষটি। কিন্তু গোটা জীবনটা তার বড়ই যন্ত্রণার। ওই তরুণীর মাতৃগর্ভে থাকার সময়ই তার বাবা বিয়ে করে চলে যায়। জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় মায়ের। একমাত্র আশ্রয় ছিল মাসি, দিদা ও দাদা। ছোটবেলা কোনোরকমে কাটলেও মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে লাগাতার যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল তাকে।

সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে। বাড়িতে কেউ না থাকায় দাদার কাছে টানা ছয়দিন ধর্ষণের শিকার হতে হয় তাকে। ছোট্ট মেয়েটি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার স্কুলেরই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর মণ্ডলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কিশোরী হৃদয়। নিজের ওপর অত্যাচারের কথা খুলে জানায় প্রেমিককে। শুভঙ্কর বিষয়টি জানায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। তাদের পক্ষ থেকে কুলতলি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এর পরিণতি হয় আরো মারাত্মক।

অভিযোগ করার ‘অপরাধে’ বাড়ি ছাড়তে হয় অসহায় মেয়েটাকে। তাকে যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দেওয়ারও চেষ্টা করে তার অত্মীয়রা। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায়। সেখানেই নতুন জীবন শুরু হয় নির্যাতিতা ওই সাহসী কিশোরীর। নতুন করে পড়াশোনাও শুরু করে। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পাস করেন ওই তরুণী। ততদিনে স্নাতক পাস করে ফেলেছেন শুভঙ্কর।

প্রথমে উপার্জনের জন্য গাড়ি চালানোর কাজ শুরু করলেও পরবর্তীকালে মাছের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। একইসঙ্গে ছোটবেলার প্রেমিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শুভঙ্কর। প্রাপ্তবয়স্ক হলে ওই তরুণী হোম কতৃপক্ষের কাছে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পাত্র হিসেবে শুভঙ্করের কথা জানান তিনি। যোগাযোগ করা হয় শুভঙ্কর ও তার পরিবারের সঙ্গে। এরপর গত সোমবার কুলতলির পূর্ব গোপালগঞ্জে শুভঙ্করের বাড়িতেই তাদের বিয়ে হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *