জুড়ীর বিতর্কিত সেই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে বিভাগীয় কমিশনার

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:

মৌলভীবাজারের জুড়ীর বিতর্কিত সেই উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে জুড়ীতে এসেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সকাল ১০টায় তিনি জুড়ীতে আসেন। এ সময় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানা, জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান রুহুল ইসলামসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

পোলট্রি খামারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট, ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের যন্ত্রপাতি ভাঙচুর এবং করোনা পরিস্থিতিতে বিশাল গণজমায়েত সৃষ্টি করার দায়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এই তদন্ত শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত ২১ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান  সাক্ষরিত একটি চিঠি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা  এম এ মোঈদ ফারুকের কাছে পাঠানো হয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে ১৮ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সূত্রোল্লিখিত স্মারকে উল্লিখিত অভিযোগ/অপরাধের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার।

এসময় বিভাগীয় কমিশনার এ সময় মামলার বাদী দ্বীনবন্ধু সেন,শাহজাহান ভূঁইয়া এবং প্রধান আসামী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক সহ সাক্ষীদের বক্তব্য নেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত প্রসঙ্গে ২৮ মে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার পরিচালক মো. ফজলুল কবীর সাক্ষরিত একটি চিঠি উপজেলা চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয় এবং উক্ত অভিযোগ/ অপরাধের বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য থাকলে লিখিতভাবে দালিলিক প্রমাণাদিসহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছিল।

এর আগে গত ৫ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের স্মারকের সূত্র ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ে তাঁর জবাব পাঠান। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে স্বীয় পদ থেকে অপসারণের লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ১৮ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (উপজেলা-২ শাখা) উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সাক্ষরিত একটি চিঠি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারস্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠির সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে রাত ১০ টায়  জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামে অবস্থিত ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ এ বেআইনিভাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে তাণ্ডবলীলা চালায়। এ সময় বাধা দিলে ফার্মের মালিক দীনবন্দু সেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এতে খামার মালিকের আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন হয়।

সুত্র: সিলেটটুডে

এছাড়া স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ধান কাটার হারভেস্টার মেশিনের যন্ত্রপাতি ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়। হামলার ঘটনায় বিশাল গণজমায়েত করে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সংকটময় মুহূর্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটানো হয়।

এসব অভিযোগ/অপরাধের কারণে কেন তাঁকে (উপজেলা চেয়ারম্যান) উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ (সংশোধিত-২০১১) এর ১৩ ধারা অনুযায়ী কেন তাঁকে স্বীয় পদ হতে অপসারণ কার্যক্রম শুরু করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানো হয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১২ মে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব অসন্তোষজনক বলে প্রমাণিত হয়।

এমতাবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে আনীত অপরাধের কারণে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ (সংশোধিত ২০১১) এর ১৩ ধারা অনুযায়ী তাঁকে তাঁর স্বীয় পদ হতে অপসারণের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের সদস্য ও মহিলা সদস্যদের (অপসারণ, অনাস্থা ও পদ-শূন্যতা) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুককে প্রধান আসামিসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে পোলট্রি খামারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন খামার মালিক দীনবন্ধু সেন।

বিভাগীয় কমিশনার মো মশিউর রহমান জানান, তদন্তের জন্য সবার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।পরবর্তীতে তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।

 

 

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *