গাছ পড়ে তিনজনের মৃত্যু, এক বিছনায় থেকেও বেঁচে গেলো সেলিনা

বেঁচে আছি বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমার পাশেই মামি ও মামাতো ভাইবোনের নিথর দেহ পড়ে ছিলো। কিভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলাম বুঝতেই পারিনি। এমনটি বলছিলো কালবৈখাশী ঝড়ের তাণ্ডব থেকে বেঁচে যাওয়া স্কুল শিক্ষার্থী সেলিনা বেগম (১৩)।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের সোলেমানপুর গ্রামে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছচাপায় বসতঘরের খাটে শোয়া অবস্থায় তিনজন মারা যান। নিহতরা হলেন মৌসুমী বেগম (৩৫), হোসাইন মিয়া (১) ও মাহিমা বেগম (৪)। ওই খাটেই মামী ও মামাতো ভাইবোনদের সাথে শুয়ে ছিলো সেলিনা।

সে বলে, সেহরি খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড় ও একের পর এক বিকট বজ্রশব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার ও মামির। তখন ভয় কাঁপছিলাম। হঠাৎ একটি গাছ আমাদের ঘরের খাটের ওপর আছড়ে পড়ে। গাছের মূল অংশ মামি ও দুই শিশুর ওপর পরে। এতে ঘরটিও দুমড়ে মুচড়ে যায়। গাছ পরার পর কিছুক্ষণ জ্ঞান ছিলো না। জ্ঞান ফিরে আসার পর চিৎকার করতে থাকি। বাঁচার চেষ্টা করি।

সেলিনা বলে, মামি ও তার দুই সন্তানের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর সামান্য ফাঁকা জায়গা পেয়ে ঘর থেকে কোনমতে বেরিয়ে আসি। গাছ ও চাল আমার শরীরের সামান্য ওপরে ছিল।

নিজে বেঁচে গেলেও মা হারা সেলিনা মামির কাছে মায়ের আদরেই ছিল। তাকে ও তার সন্তানদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে সে।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেলিনা ছোটকালে তার মাকে হারিয়ে মামা হারুন মিয়া ও নানা ইয়াংরাজ ও নানী নুরজাহানের কাছে বেড়ে উঠে। তাদের গ্রামের বাড়ীর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চকবানিয়াপুর গ্রামে। তার বাবা দিলু মিয়া গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। নানা, নানী ও মামার সঙ্গেই জগন্নাথপুরে বসবাস করে সেলিনা। স্থানীয় পাটলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

সেলিনার নানা ইয়াংরাজ উল্লা জানান, ঝড়ের সময় আমি ও আমার স্ত্রী পাশের একটি কক্ষে ছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের পাশের আরেকটি কক্ষে গাছ পড়ে আমার ছেলের বউ, নাতি ও নাতনি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আমরা ঝড়ের মধ্যে বের হয়ে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টাকালে দেখতে পাযই সেলিনা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেলেও বৌমা ও নাতি ও নাতনির মৃত্যুতে আমি বাকরুদ্ধ।

এদিকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় সেলিনার মামা হারুন মিয়া। তিনি জানান, ঝড়ে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি কেন বাঁচলাম। তাদের সঙ্গে মরে গেলাম না কেন, বলে কাঁদতে থাকেন। ঝড়ের সময় তিনি ফজরের নামাজের জন্য অন্য একটি কক্ষে ছিলেন।

প্রসঙ্গত, জগন্নাথপুরের সোলেমানপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বুলু মিয়ার বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চকবানিয়াপুর গ্রামের হারুন মিয়া তার স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে থাকতেন। তিনি প্রবাসীর বাড়ি দেখাশোনার পাশাপাশি স্থানীয় মিনহাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খন্ডখালিন শিক্ষকতা করতেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছচাপায় কাঁচা বসতঘরে হারুনের স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *