ইতালিতে ১৪০ টাকায় ২৬ ঘণ্টা কাজ করতেন বাংলাদেশিরা!

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

ইতালির জাতীয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চোখের জলের কথা। ইতালির খামার মালিকরা কীভাবে ২৬ ঘণ্টার শিফটে কাজ করিয়ে ঘণ্টায় দেড় ইউরো, যা বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১৪০ টাকা বেতন দিয়ে, গিনিপিগ বানিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশিদের সেসব কথাই ২৩ জুন উঠে এসেছে ইতালির এক দৈনিকে। ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় কালাব্রিয়া বিভাগের কোসেনছা প্রভিন্সে এক অন্ধকার কৃষি খামারে নামমাত্র পারিশ্রমিকে আটকে রেখে চরম নির্যাতনও করা হত তাদেরকে। মালিকরা টেবিলে বসলেও দাসপ্রথার মতনই বাঙালি শ্রমিকদের রাখা হত মাটিতে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কোসেনছা প্রভিন্সের আমান্তেয়া পৌর এলাকার কৃষি খামারে দিনের পর দিন অন্যায় অত্যাচার সইতে না পেরে খামারে কর্মরত এক বাংলাদেশির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের স্পেশাল ফোর্স অতি সম্প্রতি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করলে বেরিয়ে আসে অন্ধকার জগতের বাস্তবতা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে খামারের ৫ ইতালিয়ান মালিক জেন্নারো, ফ্রাঞ্চেস্কো, রক্কো, সাভেরিও এবং রবের্তোকে। এদের সহযোগী হিসেবে আটক হয়েছে দুই বাংলাদেশি দালাল আনোয়ার হোসেন মিজান এবং কাকন দাস।

কোসেনছা প্রভিন্সের পাওলা এরিয়ার প্রসিকিউটর পিয়েরপাওলো ব্রুনি এবং ম্যাজিস্ট্রেট মারিয়াগ্রাৎসিয়া এলিয়া জানান, হাজার হাজার মাইল বিপদসংকুল ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে স্বদেশি দালালদের মাধ্যমে ইতালি আসার পর ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী এসব হতভাগ্য বাংলাদেশিদের নিয়ে এখানকার স্থানীয় কাজের বাজারে যা ঘটেছে তা রীতিমতো ভয়ংকর। ঘন্টায় মাত্র ১ ইউরো ৫০ সেন্ট পারিশ্রমিক দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি খামার মালিক, গালিগালাজ ও হুমকিধামকিতে টানা ২৬ ঘন্টার শিফটেও কাজে বাধ্য করতো শ্রমিকদের। দিন শেষে ভাঙ্গা টয়লেট সমৃদ্ধ ছোট এপার্টমেন্টে ১০ জনকে রাখা হতো গাদাগাদি করে।

নিপীড়ন আর বঞ্চনার শেষ ছিলো না খামারে। আটককৃত ৫ মালিক এবং পালিত দালাল ও সহযোগী সাঙ্গপাঙ্গরা খামারের অভ্যন্তরে নিজেরা চেয়ার টেবিলে বসে খাবার খেলেও ভিন্ন রঙের অন্য চামড়ার ‘গিনিপিগ’ বাংলাদেশিদেকে খাবার খেতে দেয়া হতো তাদের সামনেই মাটিতে লাইন ধরে বসিয়ে।
স্থানীয় পুলিশের উপপ্রধান জুসেপ্পে জানফিনি কর্তৃক পরিচালিত অপারেশনে অবশেষে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় অপরাধীদের। দেড় ইউরো, যা বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১৪০ টাকা, ঘণ্টা বেতনে আর টানা ২৬ ঘন্টার শিফট ডিউটির লোমহর্ষক খবরে নিন্দার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতালিয়ানদের মাঝেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *