অংকের জোরে টিকে যাচ্ছেন রাসেল ডমিঙ্গো?

রাসেল ডমিঙ্গো খুবই ভালো ইংরেজি বলেন হয়ত এইবার এজন্যই টিকে যাবেন,দলের ক্রিকেটীয় স্কিলের উন্নতি না ঘটাতে পারলেও হয়ত তাদের অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে শেখাতে পারবেন। এছাড়া তাকে দলের সাথে রাখার কোন কারন নেই। তিনি বাংলাদেশে হাইপারফরম্যান্স ইউনিটের কোচ হতে এসেছিলেন কিন্তু বিসিবি কোচ না পেয়ে তাকেই করল প্রধান কোচ। যার মাশুল বেশ চড়া মূল্য দিয়ে গুনতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমর্থকদের। 

রাসেল ডমিঙ্গো অধীনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতাগুলো

১। অনভিজ্ঞ ওয়েস্টইন্ডিজ সাথে ঘরের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হার।

২। ঘরের মাটিতে আফগানিস্তানের সাথে টেস্ট সিরিজ হার।

৩। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল স্কটল্যান্ডের সাথে হার এবং সুপার টুয়েলভে কোন ম্যাচ জিততে না পারা।

৪। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ প্রথম দল হিসিবে এক বছরে চারবার ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে ।

৫। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে টি-টুয়েন্টি সিরিজ হার।

স্টিভ রোডসের অধীনে বিশ্বকাপে যে সাউথআফ্রিকাকে বলে কয়ে হারিয়েছে টাইগাররা সেই আফ্রিকার সাথেই ডমিঙ্গো বাহিনী বাহিনী কোন পাত্তাই পেল না। উল্টো বাংলাদেশ ৮৪ রানে অলআউট হয়ে সমর্থকদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিল। ২০১৯ বিশ্বকাপে স্টিভ রোডসের অধীনে বাংলাদেশ যখন আশানুরূপভাবে পারফরম্যান্স করতে পারেননি তখন কিন্তু ঠিকই তাকে বলির পাঠা বানিয়ে দিয়ে বিদায় দেয় বিসিবি। এদিকে রাসেল ডমিঙ্গো অধীনে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়ে অনেক জঘন্য খেলেছে। সুপার টুয়েলভের তাদের নির্ধারিত ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৫টি ম্যাচই হেরেছে। কিন্তু ডোমিংগো অংকে স্টিভ রোডস থেকে ভালো হওয়ায় টিকে যাচ্ছেন সামনের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বিসিবি এইখানে চরম অপেশাদারি আচরন করেছে বিশ্বকাপের আগেই ডোমিংগোর সাথে নুতুন চুক্তি করে। তাই এখন যদি উনাকে বরখাস্ত করা হয় তাহলে চুক্তির পুরো টাকাটাই নিয়ে যাবে।

বলতে গেলে রাসেল ডমিঙ্গো এখন বিসিবির জন্য গলার কাটা। এটি হয়েছে একমাত্র তাদের দুরদর্শিতার অভাবে। ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর বিসিবি তার মেয়াদ বাড়ায়। কিন্তু এই সিরিজের ফলাফল দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল অনেক বড় একটি ভুল। মিরপুরের উইকেটের যে অবস্থা কোন কোচ না থাকলেও বাংলাদেশ সিরিজগুলো জিতত। এইখানে তিনি কোচ হিসাবে দলের জন্য আলাদা কিছুই করেননি। ইউএইতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যদি দল ভালো করত তখন বরং তিনি এর জন্য প্রশংসা পেতেন। তখন হয়ত বিসিবি মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে পারত।

রাসেল ডমিঙ্গোর কোচিং দর্শন অনেকটা রক্ষনাত্নক মেজাজের। টি-টুয়েন্টিতে যেখানে অন্যান্য দলগুলো টার্গেট তাড়া করতে দেখা যায় সেখানে ডোমিংগোর অধীনে বাংলাদেশ প্রায় সবগুলো ম্যাচেই প্রথমে ব্যাট করেছে। টি-টুয়েন্টির ফরম্যাটে পরে ব্যাট করা অনেকটা সহজ এবং টার্গেট সেট করা সব সময় চ্যালেঞ্জিং কাজ। প্রথম ব্যাট করে জিততে হলে অবশ্যই বোর্ডে ভাল একটা স্কোর দাড় করা বাধ্যতামূলক। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রথমে ব্যাট করে চরম ব্যর্থ হওয়ার পরও ডোমিংগ পাকিস্তাতান সিরিজেও তার গেইমপ্ল্যান থেকে একচুলও সরেননি। ফলসরূপ বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের সাথে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে।

সদ্যসমাপ্ত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখলে বুঝা যায় রাসেল ডমিঙ্গোর কোন নির্দিষ্ট গেমপ্ল্যানই ছিল না। শ্রীলংকা ও ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত ভালো করলেও শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে পারেননি। নবাগত নামিবিয়া সুপারটুয়েলভে একটি ম্যাচ জিততে পারলেও বাংলাদেশ টেস্ট প্লেয়িং দল হয়েও সবগুলো ম্যাচে প্রতিপক্ষের কাছে অসহায় আত্নসর্মপন করেছে। কোচ হিসাবে রাসেল ডোমিংগ দুরদর্শিতা দেখাতে পারেননি। কিন্তু এত সবের পরও বিসিবি ঠিক কিসের ভিত্তিতে তাকে বেতন বাড়িয়ে রাখছে তা বুঝা মুশকিল। যেকোনো কোচের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের মত বড় আসরের পারফরম্যান্সকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। কিন্তু বিসিবি হয়ত এক্ষেত্রে মুলায়ন করতেই যাবেনা কারন তারা নিজেরা আগেই এর পথ বন্ধ করে রেখেছে।

রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজম্যান্টের মধ্যে যে দুরত্ব বেড়েছে তা বুঝার জন্য খুব বড় ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই। তাছাড়া যেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স এর উপর বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে আস্তে আস্তে নিজেদেরকে মেলে ধরছিল,  সেই তাদেরকেই বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করে দল থেকে বের করার পায়তারা করছেন। যার সর্বশেষ উদাহরন মুশফিকুর রহিমের পাকিস্তান দল থেকে বাদ পড়া। এর আগে তার পরামর্শে মোতাবেকই মাহামুদল্লাহকে টেস্ট থেকে বাদ দেয়া হয়।

দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজ জয়কে ভিত্তি করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ডমিঙ্গোর সাথে চুক্তি নবায়ন করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ মিরপুরে যেই ধরনের উইকেটে খেলে সিরিজগুলো জিতেছে সেখানে দলের যদি কোন কোচ নাও থাকত তাহলে জিততে পারত। সুতরাং এটা বলাই যায় এইখানে ডোমিংগোর তেমন কোন ক্রেডিট নেই। তার অধীনে বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপের সুপারটুয়েলভে অন্তত দুইটা ম্যাচও জিততে পারত তাহলেও কথা ছিল। অথচ টাকার হিসাবে প্রতি বছরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পর সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়ে থাকেন। প্রশ্ন হল বিসিবি কেন এত টাকা দিয়ে পুরোপুরি ব্যার্থ ডমিঙ্গোর  বুঝা বইবে। কোচের কি এত অভাব পড়েছে?

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *