৭ মাস পর মাধবকুণ্ডে পর্যটকদের ঢল, ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি

বিয়ানীবাজারের ডাকঃ  

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রকৃতির জলকন্যার সান্নিধ্য উপভোগ ও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন মাধবকুণ্ডে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে ৭ মাস বন্ধ থাকার পর (০১ নভেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মাধবকুণ্ড।

করোনা পরিস্থিতির কারণে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত বন্ধ ঘোষণা করায় পর্যটনকেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েন। জলপ্রপাত খুলে দেওয়ায় তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। প্রথম দিনেই অনেক পর্যটক মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বেড়াতে গেছেন।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর জুড়ে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকত। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ অবকাশ পেলেই ছুটে আসেন মাধবকুণ্ডে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবে সেখানে একটু বেশি পর্যটকের সমাঘম ঘটে। পর্যটকের পদভারে তখন মুখর হয়ে ওঠে জলপ্রপাত ও আশপাশ এলাকা। এতে বেচাকেনা বাড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় ১৯ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাধবকুণ্ডের গেট বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।

রবিবার (১ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৭ মাস পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় প্রাণ ফিরেছে মাধবকুণ্ডের প্রকৃতিতে। নির্জন পাহাড়ি ঝরনার আশপাশে ফিরেছে বুনো আবহ। পর্যটকদের হেঁটে চলার পথে জমে ওঠেছে শ্যাওলা। ফাঁকা জায়গাগুলোতে মাথা তুলছে বুনো ঘাসলতা, জেগে উঠছে চেনা-অচেনা গাছ। দীর্ঘদিন পর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে প্রকৃতির নতুন রূপ, ঝর্ণার শব্দের সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কলকাকলি ও পর্যটকদের উচ্ছ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়েছে। পর্যটকদের কেউ কেউ জলপ্রাপাতের জলে নেমে শরীর ভিজিয়েছেন। হাঁটু সমান জলের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আবার অনেকে স্মৃতি ধরে রাখতে প্রিয়জনদের সাথে ছবি তুলেছেন।

হবিগঞ্জ থেকে বাবার সাথে মাধবকুণ্ডে এসেছে সামিয়া রহমান মাহি। সে জানায়, জায়গাটা খুব সুন্দর। এখানে এসে তার খুব আনন্দ লাগছে।

মাধবকুণ্ডের অভ্যন্তরে শরবত, পানি বিক্রি করতেন তাজুল ইসলাম। সাড়ে ৭ মাস পর আবার বসেছেন পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এলাকায়। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে শরতব, পানি বিক্রি করে ভালোভাবে চলতে পারতাম। জীবনে যেতা করছি না অতা ৭ মাস করছি করোনার কারণে। ৩০০ টাকা রোজে পুঞ্জিতে কাজ করছি। মশার কামড় খাইছি। কত কষ্টে এই দিন পার করছি। এখন মাধবকুণ্ড খুলেছে। পর্যটকের কাছে শরবত আর পানি বিক্রি করিয়া চলতে পারমু। খুলে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের ছবি তুলে দিয়ে রোজগার করতেন জুয়েল আহমদ। করোনায় বন্ধ ঘোষণার পর বেকার হয়ে পড়েন। তার মতো যারা ছবি তুলতেন তাদেরও একই অবস্থা হয়। খুলে দেওয়ায় তারা অনেক খুশি। জুয়েল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেছি। মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন ছবি তুলে রোজগার করতে পারব।’

মাধবকুণ্ড পর্যটক সহায়ক ও উন্নয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে পর্যটকদের জন্য কাজ করি। যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। সে জন্য একটি দল সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখে।’

পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ভানু লাল রায় বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা মাধবকুণ্ড ঘুরছেন। প্রথম দিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো পর্যটক এসেছেন। তবে কয়েকদিন গেলে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা কাজ করছি। যাতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *