৪/৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসা সুপারের নিয়োগ বাণিজ্য

সিলেটের বিশ্বনাথের একটি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির পর আগের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে সুপারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, ৪ থেকে ৫লাখ টাকা হারে ঘুষের বিনিময়ে ২১টি পদের মধ্যে বাইরের ৭জন শিক্ষকে নিয়োগ দিয়েছেন মাদ্রাসা সুপার মাওলানা রায়হান উদ্দিন। এছাড়া আরও ১৫জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জনতা ব্যাংকে আলাদা আলাদা একাউন্ট খোলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ ওঠেছে সুপারের বিরুদ্ধে।

রায়হান উপজেলার ‘আমতৈল পঞ্চগ্রাম মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা’র সুপারেন্টেনডেন্ট এবং আমতৈল জমশেরপুর গ্রামের মৃত মালানা ইমাদ উদ্দিনের ছেলে।

প্রাক্তণ শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, ১৯৯৯সালে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর ইবতেদায়ী (৫ম শ্রেনী পর্যন্ত) শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় গ্রামের মাওলানা রায়হান উদ্দিনকে। এরপর ২০০৪ সালের দিকে মাদ্রাসার সুপার হন তিনি।

২০১৯ সালে এমপিওভুক্তির পর মাদ্রাসার প্রাক্তণ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে ১৫জনের নিকট ৪/৫লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬জনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আজিজুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ৫লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আজিজুল হক নামের একজনকে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ৭জনের সরকার প্রদত্ত ১৭ মাসের বেতন প্রায় ৪০ লাখ টাকাসহ মোট প্রায় ১কোটি টাকা জালিয়াতি ও প্রতারনার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এসব অভিযোগ এনে গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার  মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমতৈল গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান। ওইসকল অভিযোগ এনে ওইদিন রাতে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা রায়হান উদ্দিন ও বর্তমান সভাপতি আমতৈল গ্রামের আলাউদ্দিনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।

আমতৈলের হুমায়ূন রশীদ বলেন, তার স্ত্রীকে চাকরি দেবার কথা বলে ৪লাখ টাকা নিয়েও অন্যজনকে চাকরির জন্য মনোনীত করেছেন মাদ্রাসা সুপার। আর পাশ্ববর্তী উপজেলা ছাতকের শেখপাড়া গ্রামের মিয়াজান আলীর ছেলে নুর উদ্দিনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জনতা ব্যাংক (হিসাব নং ০১০০২২২৭৫২০১৩) বিশ্বনাথ শাখায় ৩ লাখ টাকার চুক্তির পর ১লাখ টাকা নেন সুপার রায়হান উদ্দিন। বাকি ৩লাখ টাকা সময়মত দিতে না পারায় শহিদুল ইসলাম নামের অন্য একজনের নিকট থেকে ৪লাখ টাকা নিয়ে তাকেই শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এপ্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দে ও বর্তমান সভাপতি আলা উদ্দিনের যোগসাজষে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিসহ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মাদ্রাসা সুপার। সরকারিভাবে তদন্ত না করে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখা, যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের সম্পর্কে এবং মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি সম্পর্কে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। আর এ বিষয়ে তদন্ত করা হলে শতভাগ সত্যতাও পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

মাদ্রাসা সুপার মাওলানা রায়হান উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘুষ, দুর্নীতির সকল বিষয় সত্য নয়।

মাদ্রাসার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি আলা উদ্দিনের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কন্তি দে বলেন, ঘুষ নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি তার জানা নয়। আর ওইসকল শিক্ষক নিয়োগেও তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

অভিযোগ পাওয়ার পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান বলেন, অভিযোগের আলোকে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *