সুনামগঞ্জে নির্মাণকালেই ভেঙে পড়ল ১৫ কোটি টাকার সেতু

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ

প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলছিল। ৮০ ভাগ কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যেই ভেঙে একাকার হয়ে গেছে সেতুটি। কাজে অনিয়ম হওয়ার কারণে সেতুটির সবগুলো গার্ডার ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়কে রোববার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নির্মাণাধীন কুন্দানালা সেতুটির পাঁচটি গার্ডারই ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, কাজে অনিয়ম হওয়ায় গার্ডারগুলো ভেঙে গেছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, কাজে অনিয়ম নয়, মেকানিক্যাল ত্রুটির কারণে হাইড্রোলিক পাইপ ফেটে যাওয়ায় ওজন নিতে পারেনি, এ কারণে একটার ওপর আরেকটা গার্ডার পড়ে সবকয়টি ভেঙে গেছে। একই দাবি করে সওজ প্রকৌশলীরা বলেছেন, এর দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমাতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ডাবর পয়েন্ট থেকে পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়ক হচ্ছে। এ সড়কের প্রশস্তকরণ এবং পুরাতন সেতুগুলো ভেঙে সাতটি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ছয় মাস আগেই। এরমধ্যে সড়কের ছাতক অংশের কুন্দানালা খালের ওপর প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট ১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট ২৫ মিটার প্রস্তের সেতু নির্মাণের কাজ করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এ- ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

১৬০ টন ওজনের একেকটি গার্ডার নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে দাবি করে স্থানীয় লোকজন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি ও কাজে অনিয়ম না হলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না। এ দুর্ঘটনা যান চলাচল শুরু হবার পরে ঘটলে অনেক প্রাণহানি হত।

সেতুর পাশের ছাতকের ভাতগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিব্বির আহমদ বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞ নয়, তবে আমাদের মনে হচ্ছে, এখানে কাজে গাফিলতি ও অনিয়ম রয়েছে। না হয় এভাবে সবকয়টি গার্ডার কেন ভেঙে যাবে।

একই এলাকার আমিন উদ্দিন বলেন, এই সড়কের অন্য সেতুগুলোর কাজের মান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যাচাই করা জরুরি। বিশেষ করে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরও দুটি সেতুর কাজ করছে, সেগুলোর কাজের মান কেমন হয়েছে, তা যাচাই জরুরি। ভেঙে পড়া গার্ডারগুলোর আর্থিক দায় যার ওপরই বর্তাক, কোটি কোটি টাকার এই গার্ডার নির্মাণে অনিয়ম ছিল কি-না, এ বিষয়টিও যাচাই করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, সেতুর ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। গার্ডার বসানোর সময় হাইড্রোলিক পাইপ ফেটে যাওয়ায় ওজন নিতে পারেনি, একটার ওপর আরেকটা পড়ে সবকয়টিই ভেঙে গেছে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, গার্ডারগুলো সরানোর সময় মেকানিক্যাল ত্রুটির কারণে হাইড্রোলিক পাইপ ফেটে যায়। কাজে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। গার্ডার ভাঙার দায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিংবা সরকার নেবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে গার্ডার নির্মাণ করে সেতুর কাজ শেষ করতে হবে। আমরা যেহেতু বিল দিইনি, কাজ সঠিকভাবে এবং সময়মত শেষ না করলে বিল দেওয়া যাবে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *