বড়লেখায় দখলকৃত খাসিয়াপুঞ্জি উদ্ধার করল প্রশাসন

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা চা-বাগানের বনাখলাপুঞ্জির পানজুম অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার (৪ জুন) বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে জুমটি দখলমুক্ত করেছে। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়।

এসময় জুমে দখলদারদের তৈরি করা ৩টি টিনশেডের ঘর উচ্ছেদ করে খাসিয়া ও চা-বাগানের কাছে জুমের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় এক সপ্তাহ পর জুম দখলমুক্ত হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে খাসিয়াদের মধ্যে।

উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। এসময় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর, বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূসরাত লায়লা নীরা, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ প্রমুখ।

গত শুক্রবার (২৮ মে) সকালে বনাখলাপুঞ্জির জুম দখল করে স্থানীয় কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একদল ব্যক্তি খাসিয়াদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর জুম দখল করে সেখানে তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করে খাসিয়াদের তাড়িয়ে দেয়। একসপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে খাসিয়াদের তারা জুমে প্রবেশ করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এই ঘটনায় গত রোববার (৩০ মে) পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন।

বনাখলাপুঞ্জির বিকম আমত্রা বলেন, ‘জুম উদ্ধার হওয়ায় আমরা খুশি। তবে এরআগেই দখলদার আমাদের জুমের অনেক পান চুরি করে নিয়ে গেছ। এতে গরীব চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

জুম উদ্ধারের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বনাখলাপুঞ্জির পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ। যদিও উদ্ধার অভিযানের পর আমাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। কিন্তু জুম উদ্ধারের পর পুলিশ সার্কেল তাৎক্ষণিক আমাদের সাথে বসেন। কথা বলেন। তার আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তিনি বলেছেন, যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশ আমাদের পাশে থাকবে।’

বৃহত্তর সিলেট আদিবাসি ফোরামের মহাসচিব ফিলা পতমী বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এখানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে আমরা যা বুঝতে পেরেছি দুই পুঞ্জির লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। আজকে উদ্ধার অভিযানের পরে আমরা এলাকা আবার ভিজিট করি। এলাকাবাসীদের সঙ্গে আলাপে তাদের স্বস্তি দেখতে পাই। যদিও কিছু কিছু মানুষের মাঝে এখনও আতঙ্ক আছে। দখলকারীরা প্রতিহিংসামূলক কোনো কর্মকাণ্ড করে কিনা। ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে প্রশাসনের ভূমিকা পজেটিভ ছিল। আমরা সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানাই। তারাও শুরু থেকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ করেছেন।’

অভিযান শেষে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘শুক্রবার বনাখলাপানপুঞ্জির পানজুম দখলমুক্ত করা হয়েছে। জায়গাটি দুর্গম। স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী কিছুদিন জুমের জায়গা দখল করে রেখেছিল। উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে অবৈধ দখলকারিদের সমূলে উচ্ছেদ করা হয়। এরপর খাসিয়াদের তাদের পানজুমের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এতে তারা খুশি হয়েছেন। খাসিয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে ও তাদের অধিকার রক্ষায় বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর বলেন, ‘গত ২৮ মে পানজুম দখলের ঘটনায় খাসিয়া ও বাগান কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি মামলা করেন। জুম দখলের মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে জুমের জায়গা বাগান ও খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে এ জন্য নজরদারি আছে। এছাড়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সূত্রঃ সিলেটটুডে২৪

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *