টাকার বিনিময়ে ভোট, পরে দেখেন জাল নোট

আগের রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বান্ডিল হাতে তুলে দেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাবে—এই শঙ্কার কথা বলে টাকাগুলো ভোটের আগে খরচ করতে নিষেধ করেন। নির্বাচনে জিতে যান তিনি।

ভোট শেষে ভোটাররা বুঝতে পারেন, বান্ডিলে করে প্রার্থী যে টাকা দিয়েছিলেন সেগুলো মূলত জাল টাকার নোট। বিষয়টি প্রার্থীকে জানালে তিনি উল্টো জাল টাকা সংরক্ষণ করায় ভোটারকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী প্রার্থী মো. সুমন সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন অন্তত সাতজন ইউপি সদস্য। গতকাল সোমবার ওই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়।

ভোট দেওয়ার বিপরীতে টাকা নেওয়া এই ইউপি সদস্যদের কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেন, গত রোববার রাতে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকার বান্ডিল নেওয়ার পর গতকাল সোমবার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে সুমনকে ভোট দেন তারা। এরপর প্রার্থীর দেওয়া টাকায় কেনাকাটা করতে বেরিয়ে দেখেন টাকাগুলো সব জাল নোট। এ কথা প্রার্থীকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে, তাকেই পাকড়াও করবে পুলিশ।

মো. সুমন সরকার রায়গঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। জেলা পরিষদের সদস্য পদে (বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর আগেও তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ভোটারদের এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন এমন মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে। কোনো ইউপি সদস্যকে তিনি জাল টাকার বান্ডিল দেননি। ভোটাররা তাকে ‘ভালোবেসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন ইউপি সদস্য বলেন, ‘আগের রাতে সুমন সরকার নিজ হাতে টাকার বান্ডিল বিতরণ করেছেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন, এই টাকা যেন ভোটের আগে খরচ না করি। খরচ করলে টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হবে। এতে তার ক্ষতি হবে। তার কথা অনুযায়ী ভোটের আগে টাকাগুলো খরচ করিনি। ভোট দেওয়ার পর স্থানীয় ধানগড়া বাজারে গেলে দোকানদার টাকা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে দেখে বলে, এগুলো জাল নোট। এরপর টাকাগুলো নিয়ে সুমনের কাছে গেলে তিনি পুলিশে ধরিয়ে দেবেন বলে ভয়ভীতি দেখান।’

নির্বাচনে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি আইনত দণ্ডনীয়। তারা এই বিষয় সম্পর্কে এখনো জানেন না। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

ভোট আদায়ের জন্য সুমন সরকারের অভিনব আরেক কৌশলের কথা বলেছেন একজন ইউপি সদস্য। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘সুমন শুধু জাল টাকা দিয়েই প্রতারণা করেননি। ভোটের আগের রাতে তিনি ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে করমর্দন করে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি নেন। এ সময় তার হাতে একটি ছোট কোরআন শরিফ ছিল। পরে ভোটের দিন সকালে তিনি ভোটারদের বলেন—তুমি কিন্তু পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আমাকে ভোট দেবে বলে কথা দিয়েছ।’

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *